রাজ্যে এই প্রথম মা-ক্যান্টিনে মিলছে বিনামূল্যে খাবারের কুপন ! বর্জ্য পদার্থ ও প্লাস্টিকের বিনিময়ে খাবার মিলছে হুগলিতে ৷ অভিনব উদ্যোগ ভদ্রেশ্বর পুরসভার ৷
শহরকে পরিষ্কার পরিছন্ন রাখতে প্রতিনিয়ত আবর্জনা মুক্ত রাখতে সবসময়ই তৎপর পুরসভার কর্মীরা (ব্যতিক্রম ছবিটাও দেখা যায় মাঝে মাঝে) ৷ সে করণে প্রতিটি পুরসভায় নিদিষ্ট দফতর আছে । কিন্তু তা সত্ত্বেও অনেক সময় শহরকে আবর্জনা মুক্ত করা সম্ভব হয় না। এমন অবস্থা দেখে শহরকে পরিষ্কার রাখতে অভিনব উদ্যোগ নিল ভদ্রেশ্বর পুরসভা। বর্জ্য প্লাস্টিকের বিনিময়ে বিনামূল্যে খাবার দেওয়া হচ্ছে মা-ক্যান্টিনের মাধ্যমে।
ভদ্রেশ্বরে জুটমিল কলোনি-সহ বিভিন্ন বস্তি এলাকায় রয়েছে ৷ পাশাপাশি, বহু মানুষ রাস্তা-ঘাটে ও বাড়ির পাশে যততত্র প্লাস্টিক ফেলে দেয়। তাই শহরকে প্লাস্টিক মুক্ত করতে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে । সোশাল মিডিয়ায় ব্যানার দিয়ে প্রচার করা হচ্ছে 1 কেজি বর্জ্য প্লাস্টিক দিয়ে দু'টি খাবারের কুপন ও 2 কেজি দিয়ে পাঁচটি খাবারের টোকেন দেওয়া হচ্ছে।
ভদ্রেশ্বর পালবাগানে পুরসভা লজে মা-ক্যান্টিন থেকে এই বর্জ্য পদার্থের বিনিময়ে খাবার দেওয়া হচ্ছে । এমনিতেই প্রায় 300 জনকে খাবার দেওয়া হয়। কেউ 500 গ্রাম প্লাস্টিক আনলেও পাচ্ছে একটি খাবারের কুপন। পুরসভার এই উদ্যোগে খুশি শহরবাসী।
কেন এই উদ্যোগ ?
ভদ্রেশ্বর পুরসভার চেয়ারম্যান প্রলয় চক্রবর্তী বলেন, "গত 3 বছর ধরে এখানে মা-ক্যান্টিন চলে আসছে । গৃহহীন ও ক্যানসার রোগীদের বিনামূল্যে খাবার দেওয়া হয় এই এলাকায়। ভদ্রেশ্বর শহরকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য পুরসভার নিজস্ব কর্মী আছে। এছাড়াও বর্জ্য প্লাস্টিকের বিনিময়ে বিনামূল্যে খাবারের কুপন দেওয়া হচ্ছে আমাদের এখানে । মা ক্যান্টিনে 5 টাকার বিনিময়ে আমাদের এখানে ডিম-ভাত ও সয়াবিনের তরকারি দেওয়া হয় । যাঁরা সেই টাকাও দিতে পারছেন না তাঁদের জন্য পুরসভার তরফে উদ্যোগ চালু করা হয়েছে।"
এই প্রথম ভদ্রেশ্বরে মা-ক্যান্টিনে ফ্রিতে মিলছে খাবার
তিনি আরও বলেন, "প্রত্যেকের বাড়ি ও তার আশেপাশের নর্দমায় অনেক প্লাস্টিক পড়ে থাকে। সেই পড়ে থাকা প্লাস্টিক ও বর্জ্য দিলেই একটি করে খাবারের কুপন দেওয়া হচ্ছে (500 গ্রামের জন্য একটি, 1 কেজির জন্য দু'টি, 2 কেজির জন্য পাঁচটি)। ভদ্রেশ্বর শহর ও সমাজের জন্য কিছুটা শ্রমদিলে বিনামূল্যে এই খাবার পেতে পারে। নিজের বাড়ির আশপাশ পরিষ্কার রাখার জন্য এই চিন্তাভাবনা। সারাদিন জীবিকা অর্জনের জন্য সকলকেই অনেককিছু করতে হয় ৷ সমাজ পরিষ্কার রাখতে একটু ঘুরলেই 500 বা 1 কেজি প্লাস্টিক জোগাড় করা কোনও ব্যাপার না। শহর পরিষ্কার রাখা সকলেরই কর্তব্য। সেই জায়গা থেকে এই উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে ।"
বিনা পয়সায় মা-ক্যান্টিনে মিলছে খাবার
স্থানীয় বাসিন্দা বিমল রায় বলেন, "পরিবেশ দূষণ মুক্ত করার জন্য খুব ভালো উদ্যোগ নিয়েছে ভদ্রেশ্বর পুরসভা। আমি বা কেউ যদি পড়ে থাকা প্লাস্টিক কুড়িয়ে জমা দেয়, সকলেই খাবার পাবে বিনামূল্যে, 5 টাকাও লাগবে না। আমি 2 কিলো প্লাস্টিক নিয়ে এসেছি, 5টি কুপন পেয়েছি। আগামিদিনে যেন এরকমভাবে সকলেই সহযোগিতা পাক পুরসভা থেকে।"
সমাজের স্বার্থে তো এটুকুই করণীয়
মা-ক্যান্টিনে প্লাস্টিকের বিনিময়ে খাবার আনতে আসা গোপাল কর্মকার বলেন, "এটা খুবই ভালো উদ্যোগ। এমনিতেই আমরা 5 টাকার বিনিময়ে মা ক্যান্টিন থেকে খাবার পেয়ে থাকি। আর আমাদের এলাকায় রাস্তা ঘাটে পড়ে থাকা প্লাস্টিক জমা দিলে বা বাড়ির বর্জ্য পদার্থ নিয়ে এলেই বিনামূল্যে খাবার খেতে পারব ৷ আমরা যারা এমনিতেই মা-ক্যান্টিনের উপর নির্ভর করে বেঁচে থাকি তাঁরা একটু চেষ্টা করলে 1 বা 2 কেজি প্লাস্টিক জোগাড় করতেই পারি ৷ সমাজের স্বার্থে আমাদের তো এটুকুই করণীয় ৷ অন্যদিকে, ড্রেনে প্লাস্টিক না-ফেলে একটি নিদিষ্ট জায়গায় জমা করলেই শহরও পরিষ্কার থাকবে ৷ সেই প্লাস্টিক 2 থেকে 3 দিন অন্তর মা-ক্যান্টিনে আনলে বিনা পয়সায় খাবার পাব। এটা অত্যন্ত ভালো উদ্যোগ।"
2021-এ মা-ক্যান্টিনের পথচলা শুরু
উল্লেখ্য, 4 বছর আগে সাধারণ মানুষের কাছে জনপ্রিয় হয়ে ওঠা রাজ্যের প্রকল্পগুলোর মধ্যে অন্যতম মা ক্যান্টিন। 2021 সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই প্রকল্পের কথা ঘোষণা করেছিলেন। নামমাত্র খরচে সাধারণ মানুষের জন্য পুষ্টিকর খাবারের ব্যবস্থা করাই ছিল মূল লক্ষ্য। 5 টাকার বিনিময়ে এখানে খাবার খেয়ে উপকৃত হয়েছেন বলে জানান রাজ্যবাসীরা ৷
চলতি বছরের মার্চ মাসে কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম মা-ক্যান্টিনের উপভোক্তাদের এক তথ্য় ও পরিসংখ্য়ান তুলে ধরেন ৷ তিনি জানিয়েছিল, এখনও পর্যন্ত (2025-সালের মার্চ মাস) প্রায় 7 কোটি 29 লক্ষ মানুষ মা-ক্যান্টিন থেকে খাবার খেয়েছেন। প্রতি মাসে প্রায় 21 লক্ষেরও বেশি মানুষ এই ক্যান্টিনের খাবার খান।


